শঙ্খ দত্ত: সুশান্ত সিং রাজপুত
। ১৯৮৬ তে জন্ম। ২০২০ তে মৃত্যু। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে চলে যাওয়া অনেক প্রশ্ন তৈরী করছে।
ভালো অভিনেতা, ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তারপরেও অসময়ে
মৃত্যু। আত্মহত্যা। অর্থ, খ্যাতি কোনোটার ই অভাব ছিলোনা তার। তবু কেন চলে যেতে হলো?
যার নয়টা সিনেমার মধ্যে ছ’টাই বাণিজ্য সফল, কেন তাকে চলে যেতে হবে? ২০১৩ তে মুক্তি
পেয়েছিলো কাই পো চে। তারপর ২০১৪ তে পিকে। ২০১৬ তে এম এস ধোনি, দ্য আনটোল্ড স্টোরি।
এতো সাফল্যের পরেও
প্রযোজকদের প্রিয় অভিনেতা হতে পারলেন কই? তবে কি তিনি অবজ্ঞা আর অবহেলার শিকার? বলিউড
সাম্রাজ্যের ভিতরে সেই কথাটাই ঘোরাফেরা করছে যেন। সহ অভিনেতারা ও মুখ খুলছেন এখন। কেউ
বলছেন, যখনই ভালো কাজ করেছেন, ক্রেডিট গেছে অন্যের খাতায়। ধোনির বায়োপিকে দুর্দান্ত
অভিনয় করেছিলেন, সিনেমার শেষে ধোনির নাম ই বিখ্যাত হয়েছে, সুশান্ত সিং এর ডেডিকেশন
টা কেউ মনে রাখেনি। এটাই পৃথিবী। একজন পরিশ্রম করে। অন্যদের নাম হয়। এটা চলতে চলতে
মানসিক অবসাদ, হতাশা, তারপর মৃত্যু। মিডিয়া সুশান্তর মৃত্যুর পর যতটা সক্রিয়, বেঁচে
থাকা অবস্থায় কোনো মূল্যায়ন করেছিল কি? সুশান্তের মৃত্যুর পর তারা সুশান্তের বাবার
চোখের জলের লাইভ দেখাচ্ছে, কিন্তু অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপূত এর মূল্যায়ন মিডিয়ায়
সেভাবে দেখে যেতে পারেননি সুশান্ত। এগুলো থেকে যন্ত্রনা আসতেই পারে। ব্যবসায়ী পৃথিবীতে
মান - অভিমান এর কোনো মূল্য নেই। দুঃখ-কষ্টেরও কোনো মূল্য আছে বলে মনে হয়না। জীবনের
এই ব্যালেন্সটা ঠিক ভাবে করতে পারেন না অনেকে। একটা জীবনে উল্টোদিক থেকে অনেক রকমের
বল আসে। কখনো ফুলটস আসবে, কখনো আসবে ইয়র্কার। টিকে থাকতে হবে। বাজে বল পেলেই কাজে লাগাতে
হবে। যতক্ষণ সেই সুযোগ আসছে না ততক্ষন মাটি কামড়ে পরে থাকতে হবে জীবনে। সুশান্ত সিং
পারলেন কই? হতে পারতেন মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার, হতে পারতেন উচ্চপদস্থ চাকুরে। কিন্তু অভিনয়ের
আকর্ষণে তিনি নাচ শিখেছেন, থিয়েটার এ ভর্তি হয়েছেন। কাই পো চে র ঈশান ভাট দিয়ে শুরু।
তারপর পিকে-র সরফরাজ ইউসুফ, ব্যোমকেশ বক্সী, মহেন্দ্র সিং ধোনি পেরিয়ে কেদারনাথ এর
মনছুর খান, ছিছরের আন্নি। তার অভিনীত প্রত্যেকটা চরিত্র মানুষকে আনন্দ দিয়েছে। ছিছরে-তে
তার অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল আন্নি মানে অনিরুদ্ধ পাঠক। সিনেমায় তিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন,"ফলাফল
নয়, জীবনের চেষ্টা গুলোই বলে দেয়, কে সফল, কে ব্যর্থ "... এখানেই জীবন আর সিনেমার
পার্থক্য। জীবনে কোনো মেলোড্রামার জায়গা নেই। জীবনে ঝুঁকি নিয়ে মেরে খেলতে হয়। হয় ছক্কা
না হলে শূন্য। এ ভাবেই সুশান্ত সিং রাজপূত চলে গেলেন আকাশে। মহাশূন্যে। যেখানে সূর্য
আছে। আছে নক্ষত্ররা। এস্ট্রোনোমি কে বড় ভালোবাসতেন সুশান্ত।
0 Comments