এক ঝলকে

10/recent/ticker-posts

Advertisement

8844

এস. ওয়াজেদ আলীর ১৩০তম জন্মদিবসে সাংগ্রামিকের শ্রদ্ধাঞ্জলি। Sangramik

     সাংগ্রামিকের প্রতিবেদনঃ ভারতীয় ঐতিহ্যের অক্ষয় চেতনাকে পুষ্ট করার ব্রত নিয়েই এস ওয়াজেদ আলী বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো উদ্ভাসিত হয়েছিলেন। ক্ষুদ্র সংকীর্ণতার কাঁটা তার ছিন্ন করে এদেশের মহান পরম্পরার সুর সাধনায় আজন্মকাল লিপ্ত থেকেছেন তিনি। তবুও তাঁকে মনে রাখতে পারিনি আমরা।  তাঁর জন্মদিবস চলে গেছে নীরবে। ৪ঠা সেপ্টেম্বর  বাংলার  বিস্মৃতপ্রায় এক সুসাহিত্যিক এস. ওয়াজেদ আলীর ১৩০তম  জন্মদিবস। 

     কতখানি "বিস্মৃত প্রায়" তা বোঝাতে গিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক ডঃ পল্লব সেনগুপ্ত বলেন, বাংলা সাহিত্যের গবেষণা - প্রার্থীদের  এক সাক্ষাতকারে কিছুদিন আগে এক হবু গবেষককে একবার প্রশ্ন করেছিলাম - বাংলার সাহিত্য জগতের অবিস্মরণীয় পংক্তি "সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে, কোথাও তার পরিবর্তন ঘটেনি"। শুনেছেন কি না? চটপট উত্তর- অবশ্যই। এটা কার লেখা বলতে পারেন? উত্তর, সৈয়দ মুজতবা আলীর। অবাক হয়েছিলাম। এক সময়ের অসামান্য রচনা "ভারতবর্ষ"-এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় ঐতিহ্য ও পরম্পরার একটা নিখুঁত ছবি যিনি উপহার দিয়েছিলেন, তাঁকেই আমরা অসতর্ক উপেক্ষায় কত সহজে বিস্মরণের গর্ভে ঠেলে দিয়েছি। সৃষ্টি কে আপন করেছি, স্রষ্ঠা কে ভুলেছি অবলীলায়। বর্তমান প্রজন্ম তাঁকে মনে রাখতে পারেনি। অথচ তাঁর জন্ম এদেশেরই মাটিতে। 

সাংগ্রামিকের শ্রদ্ধাঞ্জলি। 


     ১৮৯০ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর হুগলি জেলার চন্ডিতলা থানার পাঁচঘরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড়তাজপুর গ্রামে এস ওয়াজেদ আলীর জন্ম। পিতামহ সেখ জামাতুল্লা ও পিতা সেখ বেলায়েত আলি। তাঁর মা খাদিজা বেগম ছিলেন  চন্ডিতলা থানার নবাবপুর গ্রামের মেয়ে।

    এস ওয়াজেদ আলীর শৈশব কেটেছে হুগলি জেলার চন্ডিতলার বড়তাজপুর গ্রামে। কর্মজীবন কলকাতায়। তাঁর মননে ভারতীয় ঐতিহ্য চেতনার জন্ম এই বাংলাকে আশ্রয় করেই। পুরো মাত্রায় তিনি বাঙালী। হিন্দু-মুসলমান মিলনের মধ্য দিয়েই তিনি বাংলার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবু তাঁকে যথোচিত সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে একটা বড়ো ঘাতটি থেকে গেছে যেন। অথচ শুধু "মাসুকের দরবারের" "ভারতবর্ষ"ই তো নয়, গুলদাস্তা, দরবেশের দোয়া, ভবিষ্যতের বাঙালী,  জীবনের শিল্প প্রভৃতি তাঁর মৌলিক ভাবনার ফসলগুলো বাঙালী জাতিকে গৌরবান্বিত করে চলেছে এখনো। তাঁর রচনা গুলিকে একত্রিত করে ২ টি খন্ড প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের 'বাংলা একাডেমি'। অনাদরের দায় হয়তো কিছুটা মিটেছে। কিন্তু দেশভাগের সময় যে বাংলাকে কিছুতেই ছেড়ে যেতে চাননি ওয়াজেদ আলী, সেই বঙ্গেরই পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাডেমীর - এখনো সময় হয়নি মনে প্রানে খাঁটি বাঙালী এক লেখকের সাহিত্যকর্মকে আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার। তিনি অর্বাচীন নন, এক অতি পরিচিত আপনজন, আমাদেরই ঘরের হারিয়ে যাওয়া এক সুসন্তান - এই বোধ কবে বাঙালীকে উদ্ধুদ্ধ করবে কে জানে? তাঁর জন্মদিনে তাঁকে পরম শ্রদ্ধা জানাই। এই সঙ্গে অপেক্ষাতেও থাকি। সম্মিলিত সম্মান জানানোর স্বপ্নপূরণের।

Post a Comment

0 Comments